করোনা মহামারীতে কাবু বিশ্বের মানুষ। এ সময়ে আরেক মরণ ভাইরাস এইচআইভি বা এইডসের কথা কিছুদিনের জন্য ভুলে থাকলেও তার দাপট যে খুব কমেছে তা নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষ নিজেদের রক্তে এইডসের জীবাণু নিয়ে বসবাস করছে। যাদের মধ্যে ৩ কোটি ৬২ লাখ পূর্ণবয়স্ক এবং ১৮ লাখ শিশু (১৫ বছরের কম বয়সী)। ২০১৯ সালে বিশ্বের প্রায় ১৭ লাখ মানুষ এইডসে আক্রান্ত হয়েছেন।
এমন পরিস্থিতিতেই গতকাল ১ ডিসেম্বর বিশ্বজুড়ে পালিত হয়েছে বিশ্ব এইডস দিবস। আর এর মধ্যেই এইডস রোগীদের নিয়ে চাঞ্চল্যকর এক তথ্য দিয়েছে এই রোগ নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠান ইউএনএইডস। তারা জানিয়েছে, কোভিড মহামারীতে অন্য অসুখের মতো এইডসের চিকিৎসাতেও বিঘœ ঘটেছে। যার মূল্য চুকিয়েছেন এইডস রোগীরা।
বিভিন্ন দেশে লাগাতার লকডাউনের ফলে অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ওষুধ উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। ফলে টানা ছয় মাস ওষুধ না পাওয়ায় এ সময়ে প্রায় ৫ লাখ এইডস রোগী মারা গেছেন। তাই এ বছরের বিশ্ব এইডস দিবসের থিম ‘এন্ডিং দ্য এইচআইভি এপিডেমিক : রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড ইমপ্যাক্ট’। আবার আশার কথাও শোনা গেছে। বলা হচ্ছে, ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত নয় বছরে বিশ্বে এইচআইভি সংক্রমণ কমেছে ২৩ শতাংশ। গত বছর ৬ লাখ ৯০ হাজার এইডস আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে, যা ২০১০ সালে ছিল ১১ লাখ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক সময় অগোচরে এইচআইভি শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে মাস দেড়েক বা আরও বেশিদিন চুপচাপ থাকতে পারে। সংক্রমণের পর অনেক সময় জ্বর, সর্দি, মাথাব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। সপ্তাহখানেক থেকে চলে যায়, আবারও হয়। এ ছাড়া শরীর ম্যাজম্যাজ করে, জ্বর আসে, মাথাব্যথা ও গা হাত পায়ে ব্যথা হতে পারে। একনাগাড়ে কোনো কারণ ছাড়াই পেটের গোলমাল ও ডায়েরিয়া চলতে থাকে, বমি বা বমিভাব দেখা যায়, গলা ব্যথা করে। উপসর্গগুলোর সঙ্গে কোভিড-১৯ বা ভাইরাল ফিভারের কিছু মিল আছে। তবে লাগাতার এ ধরনের সমস্যা চলতে থাকলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে পরীক্ষা করা উচিত। তবে অসুখ সম্পর্কে চিকিৎসককে কোনো তথ্যই গোপন করা উচিত নয়। রোগী যদি তার জীবনযাত্রার কথা নিঃসঙ্কোচে চিকিৎসককে জানান, তবে সহজে অসুখটা নির্ণয় করা যায়। পরিবারে কারও এই অসুখ থাকলে চিকিৎসককে তাও জানানো উচিত। এ সময় থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শে নির্দিষ্ট মাত্রায় অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ওষুধ খাওয়া শুরু করতে হয়।
ভারতের মেডিসিনের চিকিৎসক দীপঙ্কর সরকার জানান, প্রথম স্টেজে রোগটা ধরা না পড়লে এইচআইভি ক্রমশ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস করতে শুরু করে। এটাই এ অসুখের সব থেকে মারাত্মক দিক। এ সময়ে জ্বর আর জ্বর জ্বর ভাব ছাড়া আর বিশেষ কোনো উপসর্গ না থাকলেও রক্ত পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করা যায়। সঙ্গে সঙ্গে একত্রে কিছু ওষুধ খাওয়া ও রোজকার জীবনযাত্রায় কিছু রদবদল ঘটিয়ে ফেলতে পারলে সুস্থ থাকা যায়।
ভাইরাস প্রতিরোধী কম্বিনেশন ড্রাগ শরীরের ধ্বংস হয়ে যাওয়া রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কিছুটা ফিরিয়ে আনতে পারে। তাই অসুখ গোপন না করে সঠিক তথ্য জানিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে সহযোগিতা করা উচিত। আর যদি অসুখ ধরা না পড়ে, তা হলে অন্ত্রের সমস্যা থেকে শুরু করে ফুসফুসের জটিল অসুখসহ আরও মারাত্মক কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। ক্যানসারের মতোই কোনো কারণ ছাড়া হু হু করে ওজন কমতে শুরু করে। সারাক্ষণ শরীর ম্যাজম্যাজ করে, কোনো কাজ করতে ভালো লাগে না। সবসময় ঘুম ঘুম ভাব, কোনো কাজে মনোযোগ দেওয়া যায় না।
টানা ১০ দিন বা তারও বেশি সময় ধরে জ্বর চলতেই থাকে। জ্বরের ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক খেয়েও কাজ হয় না। লাগাতার ডায়ারিয়া চলতে থাকে। শরীর ক্রমশ দুর্বল হতে শুরু করে, সামান্য পরিশ্রমে হাঁপ ধরে, নিশ্বাসে কষ্ট হয়। কোনো কারণ ছাড়াই শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তপাত হতে পারে। আবার হাঁটু, কোমর, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন অস্থিসন্ধিতে ব্যথা যন্ত্রণা হয়। একনাগাড়ে শুকনো কাশি চলতেই থাকে। বুকে ঠা-া বসে গিয়ে ফুসফুসের সংক্রমণ ও নিউমোনিয়ার ঝুঁঁকি বাড়ে। খবর আনন্দবাজারের।
Leave a Reply